বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে এনডিআই/আইআরআই’র প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশনের বিবৃতি

ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) আয়োজিত দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক প্রাক-নির্বাচন প্রতিনিধিদল এই বিবৃতি দিয়েছে। প্রতিনিধি দলের উদ্দেশ্য ছিল আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী প্রস্তুতির একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মূল্যায়ন প্রদান করা; একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অখণ্ডতা এবং কার্যকারিতা প্রভাবিত করতে পারে এমন কারণগুলি পরীক্ষা করা; এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সম্ভাবনা এবং প্রক্রিয়াটিতে জনসাধারণের আস্থা উন্নত করতে সহায়তা করার জন্য ব্যবহারিক এবং সময়োপযোগী সুপারিশ সরবরাহ করা।

প্রতিনিধি দলের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন বনি গ্লিক (আইআরআই কো-চেয়ার), ইউএসএআইডির সাবেক ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর; কার্ল এফ ইন্ডারফার্থ (এনডিআই কো-চেয়ার), দক্ষিণ এশীয় বিষয়ক প্রাক্তন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী; মারিয়া চিন আবদুল্লাহ, মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি পরিষদের প্রাক্তন সদস্য; জামিল জাফর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির প্রাক্তন সহযোগী কাউন্সেল; আইআরআই’র এশিয়া-প্যাসিফিক ডিভিশনের জ্যেষ্ঠ পরিচালক জোহানা কাও; মনপ্রীত সিং আনন্দ, এনডিআই আঞ্চলিক পরিচালক, এশিয়া-প্যাসিফিক। প্রতিনিধিদের সাথে এনডিআই এবং আইআরআইয়ের কারিগরী এবং দেশীয় বিশেষজ্ঞরা যোগ দিয়েছিলেন।

৮ থেকে ১১ অক্টোবর, ২০২৩ পর্যন্ত প্রতিনিধিদলটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বেশ কয়েকজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি), বিভিন্ন রাজনৈতিক বলয়ের দলীয় নেতা; নাগরিক প্রতিনিধি, নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের নেতৃবৃন্দসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বর্তমান ও সাবেক নারী সংসদ সদস্য, যুব, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সাথে জড়িত সংস্থার প্রতিনিধি এবং মিডিয়া প্রতিনিধির সাথে বৈঠক করেছেন। যারা প্রতিনিধিদলের সাথে দেখা করেছেন এবং অবাধে তাদের মতামত দিয়েছেন, প্রতিনিধি দল তাদের সকলকে প্রশংসা করেছেন।

বাংলাদেশে মতাদর্শগত বহুত্ববাদ, প্রাণবন্ত গণমাধ্যম, সক্রিয় সুশীল সমাজ এবং রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত নাগরিকদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একটি শক্তিশালী ঐতিহ্য রয়েছে বাংলাদেশে। গত কয়েক দশকে দেশটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, সফলভাবে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলা করেছে এবং পরিবেশগত উন্নয়নে সফলতা দেখিয়েছে।

বাংলাদেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বলিষ্ঠ ঐতিহ্য ২০৪১ সালের উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করেছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ নির্বাচনী অখণ্ডতার জন্য বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে আপোষহীন এবং পরস্পরকে নিশ্চিন্ন করে দেয়ার রাজনীতি, বাগাড়ম্বরপূর্ন রাজনৈতিক সহিংসতা, অনিশ্চয়তা এবং ভয়ের পরিবেশ। এছাড়াও রয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতার সংকোচন এবং নাগরিক -রাজনৈতিক নেতা এবং অন্যান্য অংশীজনদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি। নারী, তরুণ এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীও অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখীন হয়। বাংলাদেশ একটি সন্ধিক্ষণে রয়েছে এবং আসন্ন নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক, অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি দেশের অঙ্গীকার পূরনে অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন।

প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশন, সরকার, রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য নির্বাচনী অংশীজনদের বিবেচনার জন্য নিম্নলিখিত সুপারিশগুলি উপস্থাপন করে। এই সুপারিশগুলি যদি নির্বাচনের অবশিষ্ট সময় এবং তার পরেও গৃহীত হয় তবে বিশ্বাসযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং অহিংস নির্বাচনের দিকে অগ্রগতি অর্জনে সহায়তা করতে পারে যা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এই রোডম্যাপে পাঁচটি মূল সুপারিশ রয়েছে যা আরও বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে

প্রতিনিধিদল স্বীকার করে যে, বাংলাদেশের জনগণই চূড়ান্তভাবে তাদের নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও বৈধতা এবং তাদের দেশের গণতান্ত্রিক উন্নয়ন নির্ধারণ করবে। তাই প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমর্থন ও শক্তিশালী করার চেতনায় এই প্রাক-নির্বাচনী বিবৃতি প্রদান করে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী প্রেক্ষাপট

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং পরিবেশগত ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকার উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। তবে, রাজনৈতিক পক্ষাঘাত এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা হ্রাস এই অগ্রগতির উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে এবং অর্থনৈতিক ও উন্নয়নের গতিপথকে দুর্বল করে দিচ্ছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় বয়কট, সহিংসতা, ধর্মঘট এবং নির্বাচনী অনিয়ম এর মতো ঘটনা ঘটে যার ফলে নির্বাচনী ফলাফলের বৈধতা নিয়ে অনেক বাংলাদেশির মধ্যে সংশয় তৈরি হয়। ফলস্বরূপ, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে ভোটপ্রদানের হার এখন নিয়মিতভাবে কম। বর্তমান নির্বাচনী প্রচারাভিযানে, রাজনৈতিক সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে, এবং বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সরকারের সমালোচকরা প্রতিনিয়তই চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ না করলে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশাসন প্রতিষ্ঠা না করলে  দেশটির প্রধান বিরোধী দল সংসদীয় নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। সরকার বিরোধীদের এ দাবী প্রত্যাখ্যান করেছে। এই অচলাবস্থা রাজনৈতিক পছন্দ থেকে বাংলাদেশীদের বঞ্চিত করছে এবংরাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। অবিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি হওয়ায় এবং রাজনৈতিক সংলাপের অভাবে উত্তেজনা এবং অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উল্লেখযোগ্যহারে সহিংসতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রধানপর্যবেক্ষণ

নির্বাচনপ্রশাসন

বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনি কাঠামো একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রদান করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সংসদ, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এবং স্বাধীনতা জোরদার করার জন্য বেশ কয়েকটি আইন পাস করেছে এবং কমিশন বিশ্বাসযোগ্য, অহিংস নির্বাচন পরিচালনা এবং প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া সহজ করার মতো প্রক্রিয়াগুলি সুশৃঙ্খল করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা সম্প্রসারণের পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে বাস্তবে সারাদেশে প্রায় ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণের নিরাপত্তা ও ভোট গণনা প্রক্রিয়ার জন্য সরকারি মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্বাচন কমিশন নির্ভরশীল। আইনগতভাবে মন্ত্রণালয় নির্বাচনী কর্মী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিতে পারে, কিন্তু প্রতিনিধিদল শুনেছে যে, বাস্তবে নির্বাচনের দিন স্বাধীনভাবে সমস্যা চিহ্নিত করার বা নির্বাচনী কর্মী ও নিরাপত্তা কর্মীদের নির্দেশনা কার্যকর করার সামর্থ্য নির্বাচন কমিশনের নেই। এর ফলে ভোট গ্রহণ ও গণনার ওপর অযৌক্তিক রাজনৈতিক প্রভাব এর সুযোগ সৃষ্টি হয়, সামগ্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস পায় এবং নির্বাচনের কার্যকর ও নিরপেক্ষ পরিচালনার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের মধ্যে দায়িত্বের রেখা অস্পষ্ট হয়ে পড়ে।

বর্তমান মেরুকরণের পরিবেশে, নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনের দিন পোলিং কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য মৌলিক বিষয় হলো সকল প্রতিদ্বন্দ্বী ভোটারদের নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং ফলাফলের উপর আস্থা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ সরকার নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বাধীনতার উন্নয়নে অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০২১ সালে, নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের জন্য, সরকার একটি পরামর্শমূলক প্রক্রিয়া পরিচালনা করেছিল যার মধ্যে সুপারিশের জন্য গণতান্ত্রিক অংশীজনদের সাথে সংলাপ অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার বন্ধ করতে ইসির সিদ্ধান্ত সমালোচকদের উদ্বেগ দূর করেছে যা প্রভাবিত করার সন্দেহে ছিল। উপরন্তু, সাম্প্রতিক স্থানীয় নির্বাচনে, বিরোধী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন, যা নির্বাচনী ন্যায্যতার একটি মাত্রা নির্দেশ করে। আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে যে তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায় এবং আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের আহ্বান জানিয়েছে।

তারপরও সুশীল সমাজ ও বিরোধী দলীয় নেতারা যাদের সঙ্গে প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়েছে, তারা ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দল কমিশন নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতিত্বের কারণে সম্ভাব্য কমিশনারদের নাম দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তাই নির্বাচনে প্রশাসনে তাদের কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই। তুলনামূলকভাবে অপরিচিত নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন দেয়ার পাশাপাশি আরও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন না দেয়ার ইসির সিদ্ধান্ত এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। ইসির কিছু কমিশনারের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নির্বাচনী আইন সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগে ইসির সদিচ্ছাকে ক্ষুণ্ণ করেছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন আলোচকরা।

পদ্ধতিগতভাবে, নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইসির পর্যাপ্ত তহবিল রয়েছে এবং এর প্রস্তুতি ভালোভাবে চলছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া ইসি প্রায় শেষ করেছে এবং প্রায় ৪০,০০০ ভোটকেন্দ্রে ৬,০০,০০০ এরও বেশি নির্বাচনী কর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করেছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জেন্ডার ভারসাম্য এবং ব্যাপক যুব অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং পোলিং কর্মকর্তাদের তাদের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা এবং কাজ নিশ্চিত করার জন্য যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের যে সকল গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়েছে, তারা নির্বাচনী প্রস্তুতি বা ভোটার তালিকার বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করেনি, তবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারণে নাগরিকরা অতীতের নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার উপাখ্যানমূলক প্রতিবেদনগুলি উল্লেখ করেছে। রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের যাদের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়েছে, তারা নির্বাচনী প্রস্তুতি বা ভোটার তালিকার বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে উল্লেখযোগ্যহারে উদ্বেগ প্রকাশ করেনি, তবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারণন নাগরিকরা অতীতের নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার উদাহরন উল্লেখ করেছে। ভোটার নিবন্ধন, ভোটার তালিকার গুণগত মান এবং পোলিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণসহ নির্বাচনী প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোতে নির্বাচনী অংশীজনরা অপর্যাপ্ত মনোযোগ দিচ্ছেন।

ক্যাম্পেইন অরথায়ন

প্রচারাভিযানের আয় ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা, স্বার্থের দ্বন্দ্বের সুযোগ হ্রাস করে এবং প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতার ক্ষেত্রকে সমান করে তোলে। কার্যকর প্রচারাভিযান আর্থিক তদারকির জন্য একটি শক্তিশালী আইনী আদেশ, পর্যাপ্ত সংস্থান এবং একটি প্রয়োগকারী ব্যবস্থা প্রয়োজন। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীগণ উল্লেখ করেছেন যে, বর্তমানে প্রচারাভিযানের আর্থিক প্রতিবেদন যাচাইয়ের জন্য নির্বাচন কমিশন খুব কম বাজেট বরাদ্ধ করেছে এবং কোনও অনিয়ম মোকাবেলাকরার জন্য তাদের আইন প্রয়োগের ক্ষমতা নেই।

নির্বাচনী তথ্য

নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনসহ বিগত নির্বাচনগুলোর জন্য ভোটকেন্দ্র পর্যায়ের ফলাফল তাদের ওয়েবসাইটে সরবরাহ করে, যা স্বচ্ছতার একটি লক্ষণ। আসন্ন নির্বাচনের জন্য প্রতিনিধি দলটি নির্বাচনী তথ্যের স্বচ্ছতার অব্যাহত প্রদর্শন হিসাবে পোলিং বুথের ভোট পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করা যায় এমনভাবে  অভিন্ন ফর্ম্যাটে ফলাফল প্রকাশ এর জন্য ইসিকে উৎস]হিত করে।

নির্বাচনীঅভিযোগওবিরোধনিষ্পত্তি

বাংলাদেশের নির্বাচনে উচ্চমাত্রার মেরুকরণ ও প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে একটি কার্যকর, নিরপেক্ষ নির্বাচনী বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। হাইকোর্ট বিভাগ, যা সুপ্রিম কোর্টের নিম্ন বিভাগ, নির্বাচনী বিরোধ পরিচালনা করে। বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে ব্যাপক সংশয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলি আশা করে যে আদালত যে কোনও নির্বাচনী বিরোধ নিরপেক্ষভাবে সমাধান করবে এবং রাজনৈতিক চাপ প্রতিহত করবে।

রাজনৈতিকদলওপ্রার্থী

প্রার্থীমনোনয়ন

সংসদের ৩৫০টি আসন এর মধ্যে ৩০০টি একক আসন রয়েছে, যার মধ্যে ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। ৫০টি সংরক্ষিত আসন সরাসরি নির্বাচিত নয়; সংসদে তাদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে দলগুলিকে বরাদ্ধ দেয়া হয়। রাজনৈতিক দলগুলি এখন একক নির্বাচনী আসনগুলির জন্য প্রার্থীদের চিহ্নিত করছে, তবে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত করেনি। দলগুলির মধ্যে মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় প্রায়শই স্বচ্ছতা এবং সত্যিকারের প্রতিযোগিতার অভাব থাকে, সমালোচনাকারীরা উল্লেখ করেন যে প্রার্থী মনোনয়নগুলি সাধারণত এমন প্রার্থীদের কাছে যায় যাদের বিদ্যমান সম্পদ, রাজনৈতিক সংযোগ বা পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে।

যেহেতু নারী, যুবক এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর প্রায়শই এই সুবিধাগুলির অভাব থাকে যা রাজনীতিতে তাদের অগ্রগতির জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে বাধা তৈরি করে। আরও বিস্তৃতভাবে, বিচ্ছিন্ন মনোনয়ন প্রক্রিয়া তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রতিশ্রুতিশীল এবং বৈচিত্র্যময় নতুন প্রার্থীদের উত্থানকে বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রচারণারপরিবেশ

প্রত্যাশিত নির্বাচনের তিন মাস আগে, রাজনৈতিক আলোচনা নীতিগত ইস্যু বা দলগুলির রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের দ্বারা প্রভাবিত হয় না, তবে প্রক্রিয়াটি বয়কট করার বিষয়ে সরকার এবং বিরোধী দলগুলির মধ্যে অচলাবস্থা রয়ে যায়। ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে জোরালো প্রচারণা চালানোর জন্য রাজনৈতিক বিরোধীদের কিছুটা সুযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে বিএনপির ‘এক দফা দাবি’ ইন্টারনেট, টেলিভিশন, প্রিন্ট মিডিয়া এবং সমাবেশে প্রচারিত হয়েছে এবং হচ্ছে। বিএনপি এবং অন্যান্য দলগুলি প্রায়শই সরকারের কাছ থেকে বৈধ অনুমতি নিয়ে সারা দেশে বড় ধরনের বিক্ষোভ করেছে। সরকারের বিরোধীরাও বাধার সম্মুখীন হয় যা তাদের বিরুদ্ধে সমসুযোগ তৈরিতে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়, যার মধ্যে রয়েছে নির্বিচারে অনুমতি প্রত্যাখ্যান বা পরিবহন ধর্মঘটের মতো পক্ষপাতমূলক বাধা, যা রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে বাধা দেয়।

বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদাহরন দিয়ে সমালোচনাকারীরা বলেন, সরকার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী ও সদস্যদের বিরুদ্ধে আদালতে লাখ লাখ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করছে, যাতে তাদের নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। সুশীল সমাজের সদস্য, সাংবাদিক, বিশ্লেষক এবং বিরোধী দলের সদস্যদের মত সরকার প্রসিকিউশনকে আরও জটিল করে তুলেছে, বিচার বিভাগকে সমন্বিত করা হয়েছে এবং এর ফলে পার্টি নিবন্ধন প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ হয়ে গেছে।

নির্বাচনীসহিংসতাওনিরাপত্তাবিধান

নির্বাচনী সহিংসতা বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবে একটি সাধারণ সমস্যা যদিও দেশটিতে ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় কম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তবে বর্তমান নির্বাচনী চক্রের সময় রাস্তায় সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্যে কার্যকর সংলাপের অনুপস্থিতিতে সহিংসতা আরও বাড়তে পারে। সমালোচনাকারীরা উল্লেখ করেছেন যে, সহিংসতা দলগুলির মধ্যে এবং দলের বাহিরেও রয়েছে, কারণ রাজনীতিবিদ এবং তাদের সমর্থকরা দলীয় মনোনয়নের জন্য অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে বা বিরোধী দলগুলির বহিরাগত প্রতিযোগীদের সাথে লড়াই করে। রাজনৈতিক দলগুলি প্রায়শই রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সহিংসতা চালানোর জন্য তাদের যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলোকে ব্যবহার করে। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীরা নির্বাচনে নারীর প্রতি সহিংসতার অনলাইন ও অফলাইন চক্র এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারীদের নিরাপদ ও অর্থবহ অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে এটি বাধা হয়ে থাকবে বলে মনে করেন।

নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আইনগত দায়িত্ব ইসির রয়েছে। যদিও বাস্তবে কমিশনের তার নির্দেশাবলী কার্যকর করার জন্য খুব কম সুবিধা রয়েছে এবং পুলিশ এবং অন্যান্য স্থানীয় সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য উল্লেখযোগ্য স্বায়ত্তশাসন রয়েছে। সমালোচনাকারীরা জানিয়েছেন যে, নিরাপত্তা পরিষেবাগুলি প্রায়শই বিরোধী ব্যক্তিত্বদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয় এবং কখনও কখনও বিরোধী সমাবেশগুলি ভেঙে দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে। ক্ষমতাসীন দলের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করা দরকার। তবে তারা উল্লেখ করেছেন যে, কিছু বিরোধী সমাবেশের যথাযথ অনুমতি ছিল না এবং এটি ঢাকাবাসীর দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করে।

নির্বাচন বাতিলে ইসির ক্ষমতা রদবদল নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সেই নির্বাচন বাতিল করার আইনী ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ছিল যেটা ২০২২ সালের অক্টোবরে গাইবান্ধা ৫ আসনের নির্বাচনে ঘটেছিল। তবে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে পাস হওয়া আইন সংশোধনে শুধু নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন বাতিলের অনুমতি দিয়ে এই কর্তৃত্ব সংশোধন করা হয়। বিরোধী দলের সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে নতুন কর্তৃত্ব একটি নির্বাচনী এলাকার নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করার উপায় হিসাবে বিরোধী দলের শক্ত ঘাঁটিগুলিতে ভোট বাতিল করতে ব্যবহার করা হতে পারে।

গণমাধ্যম ও তথ্য পরিবেশ

বাংলাদেশের গণমাধ্যম পরিবেশে সরকারের সোচ্চার সমালোচনা রয়েছে, তবে বিভিন্ন অংশীজন গ্রুপের আলোচকগণ যুক্তি দিয়েছিলেন যে, আইনী হুমকি এবং গণমাধ্যমের ব্যবসায়িক স্বার্থ প্রায়শই সরকারের পক্ষে সংবাদ প্রচারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কেড়ে নেয়। সমালোচনামূলক সংবাদ প্রচার প্রায়শই সরকারের প্রতিশোধ প্রবণতাকে উস্কে দেয়, যা স্ব-সেন্সরশিপকে আরও বাড়িয়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু সাংবাদিক এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব যারা সরকারের সমালোচনা করেন তারা প্রতিশোধ প্রবনতার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন এবং আইনি তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন; কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে গোয়েন্দা এবং সরকারী ব্যক্তিরা তাদের লেখাগুলি পরিবর্তন করতে বা মুদ্রণ থেকে বিরত থাকতে চাপ দিয়েছে। সরকার বিরোধী সংবাদপত্র দৈনিক দিনকালের মুদ্রণ লাইসেন্সও বাতিল করেছে, যা গণমাধ্যমের কণ্ঠস্বরের বৈচিত্র্যকে আরও হ্রাস করেছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলি উল্লেখ করেছে যে মিডিয়া মালিকদের স্বার্থ প্রায়শই তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বজায় রাখার জন্য সম্পাদকীয় স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে।

নাগরিক প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এবং অন্যান্য অংশীজন উল্লেখ করেছেন যে ডিজিটাল বাক স্বাধীনতা অত্যন্ত সীমাবদ্ধ। প্রতিনিধিদল শুনেছে যে সদ্য পাস হওয়া সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট টি ২০১৮ সালের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের তুলনায় একটি প্রান্তিক উন্নতির প্রতিনিধিত্ব করে এবং এটি ডিজিটাল অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করে এমন বৃহত্তর ইকোসিস্টেমের অংশ।

প্রান্তিক কণ্ঠস্বরের অন্তর্ভুক্তি: নারী, যুব ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি

নারী

বাংলাদেশের নির্বাচনে নারীরা ভোটার, প্রচারণা কর্মী, প্রার্থী, পর্যবেক্ষক ও নির্বাচনী কর্মী হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে। গত তিন দশকের বেশির ভাগ সময় ধরে বাংলাদেশে একজন নারী প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন এবং বিশেষ করে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে নারী রাজনৈতিক কর্মী ও নির্বাচিত কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ছে। তবে নারী নেতৃবৃন্দ এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা নারী-পুরুষের নেতৃত্বে সমানভাবে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক ও কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে প্রতিনিধি দলকে অবহিত করেন। পুরুষ রাজনীতিবিদরা প্রায়শই তাদের নারী সহকর্মীদের মতামতকে উপেক্ষা করেন, তাদের দক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন এবং ঐতিহ্যগতভাবে নারীদের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে তাদের নারী দলের উইং বা পলিসি ওয়ার্কিং গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করেন। উচ্চাকাঙ্ক্ষী নারী নেতাদের প্রায়শই পুরুষদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করার জন্য রাজনৈতিক নেটওয়ার্ক এবং তহবিলের অভাব থাকে এবং নারী নাগরিকরা বাংলাদেশের সহিংস রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকে।

এছাড়াও বাড়ির অভ্যন্তরে, রাজনীতিকে “নোংরা” হিসাবে দেখা হয় যা নারীদেরকে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত করে। ব্যালট বাক্সে, নারীরা ভোট দেওয়ার জন্য প্রায়শই পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ইচ্ছার পক্ষে ভোট দিতে চাপের সম্মুখীন হন। বাংলাদেশের সংরক্ষিত আসন পদ্ধতি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ যেখানে কমপক্ষে ৫০ জন নারী সংসদ সদস্যের নেতৃত্বকে নিশ্চয়তা দেয়। অনেক অংশীজন, প্রতিনিধিদলকে বলেছিলেন যে এই সদস্যদের প্রায়শই কম সম্মানের সাথে দেখা হয়, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতাও থাকে কম এবং কার্যকরভাবে ছায়া জনপ্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে। অধিকন্তু, সংরক্ষিত ব্যবস্থা রাজনৈতিক দলগুলির জন্য নারী প্রার্থীদের পেশাগত উন্নয়নে বিনিয়োগের জন্য খুব কম প্রণোদনা দেয়, যা তাদের সংরক্ষিত আসন ব্যবস্থার বাইরে প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্রগুলোতে যেতে নিরুৎসাহিত করে।

তরুন

বাংলাদেশের ভোটারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ হলো তরুণ ভোটার এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের দীর্ঘ ও প্রাণবন্ত ইতিহাস রয়েছে। তরুণরা ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থান, সড়ক নিরাপত্তা, চাকরির কোটা এবং যৌন নিপীড়ন আইন সম্পর্কিত সাম্প্রতিক নীতি-ভিত্তিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রতিনিধিদলকে বলেছেন যে, তারা নীতি-ভিত্তিক যুক্তি দিয়ে তরুণদের সংগঠিত করতে চান তবে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে তাদের সম্পৃক্ত করার কৌশল প্রকাশ করেননি। যুব-নেতৃত্বাধীন এনজিও এবং নাগরিক কর্মীরা বলেছেন, অনেক তরুণ দলীয় রাজনীতিতে হতাশ, নির্বাচন নিয়ে তাদের মোহভঙ্গ ঘটেছে এবং ভোট প্রদানে তাদের অনাগ্রহ রয়েছে। রাজনীতিসম্পৃক্ত তরুণরা প্রায়শই আনুষ্ঠানিক দলীয় ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত থাকে, যারা রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান ধ্বংসাত্মক ভূমিকা পালন করে, ক্যাম্পাসে সহিংসতা ও হয়রানির মাধ্যমে ভিন্নমতকে দমন করে। ফলস্বরূপ, হয়রানি বা আইনি পদক্ষেপের কারণে অনেক তরুণ তাদের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করতে ভয় পায়, বিশেষ করে অনলাইনে সরকারের সমালোচনা করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে তাদের শাস্তি দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন/প্রতিবন্ধী মানুষ

বাংলাদেশের নাগরিকের প্রায় ৩ শতাংশ (৪.৬ মিলিয়ন) নাগরিক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন/প্রতিবন্ধী মানুষ। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা নির্বাচনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে উল্লেখযোগ্য বাধার কথা উল্লেখ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, চলাচলে অক্ষম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য পোলিং বুথের অবস্থান এবং ভোট দানের প্রক্রিয়া সহজগম্য নয়। আন্তর্জাতিক অধিকার গোষ্ঠীগুলি রিপোর্ট করেছে যে দৃষ্টি, শ্রবণ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ভোটারদের ভোট প্রদানের সুযোগসৃষ্টির চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলায় আরও অগ্রগতি প্রয়োজন। নির্বাচনকেন্দ্রে প্রশিক্ষিত কর্মী নিশ্চিত করা, ভোটারদের দীর্ঘ লাইনের সারি কমিয়ে ফেলার উপায় খুজে বের করতে হবে।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু

বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ সুন্নি মুসলিম। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা প্রধানতঃ হিন্দু জনগোষ্ঠী অতীতে তাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার জন্য প্রাক নির্বাচনী চাপ ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলো উদ্বেগের সাথে উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা হ্রাস পাচ্ছে এবং এর ফলে সংখ্যালঘুদের প্রতি নির্বাচনী সহিংসতার সম্ভাবনা রয়েছে।

সিভিক স্পেস

সুশীল সমাজ

বাংলাদেশে অনেক উচ্চ-্সক্ষমতার বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং সামাজিক সংস্থা (সিবিও) সহ একটি বৈচিত্র্যময় এবং সক্রিয় নাগরিক কার্যক্রম এবং উদ্যোগ রয়েছে যা মানবিক ত্রাণ, আইনি সহায়তা, পরিষেবা বিতরণ এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করে। যদিও নাগরিক সংস্থাগুলি প্রায়শই কঠোর বিধিনিষেধ ছাড়াই কাজ করতে সক্ষম হয়, কিছু গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার গোষ্ঠী প্রতিনিধিদল জানায় যে, এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর মাধ্যমে আমলাতান্ত্রিক বাধা রয়েছে যা তারা মনে করে যে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। উদাহরণস্বরূপ, এনজিও এবং সিবিওগুলি আর্থিক নিরীক্ষা, প্রকল্প অনুমোদন বিলম্ব এবং তহবিল বিতরণে নজরদারীর শিকার বলে উল্লেখ করেছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা এনজিও অধিকার, যা রাষ্ট্রীয় বাহিনী দ্বারা সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের নথিভুক্ত করার জন্য পরিচিত, এর নিবন্ধন প্রত্যাহার করা হয়েছিল এবং এর দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে। যদিও সরকারি কর্মকর্তারা যুক্তি দেখিয়েছেন যে অধিকার ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে। প্রতিনিধি দলটি মানবাধিকার রক্ষকদের নিষ্ক্রিয় করার পাশাপাশি অধিকারের নেতৃত্বেকে ফৌজদারি মামলায় জড়িয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি নাগরিক সক্রিয়তার উপর বৃহত্তর প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। আন্তর্জাতিক স্তরে, গণতন্ত্র কর্মসূচিতে কাজ করা আন্তর্জাতিক এনজিওগুলিও নিবন্ধনের জন্য আবেদনে দীর্ঘ বিলম্ব এবং অস্বচ্ছ অস্বীকৃতি এবং কার্যকলাপ সংক্রান্ত সরকারী পর্যবেক্ষণের বিষয়ে রিপোর্ট করে।

নাগরিকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ

বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোর নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্য রয়েছে। দেশের জন্য যদিও এই সংগঠনগুলো ইতিপূর্বে বাংলাদেশী জনসাধারণকে নির্বাচনের একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং সময়োপযোগী মূল্যায়ন প্রদানের পাশাপাশি নির্বাচনী সহিংসতার পূর্ব সতর্কতার লক্ষনগুলি চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং নাগরিক পর্যবেক্ষণের পরিসর সংকুচিত হয়েছে।

নাগরিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো প্রতিনিধিদলকে বলেছে যে, বাংলাদেশে নাগরিক পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন, তবে তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন মূল্যায়নের জন্য রাজনৈতিক প্রতিশোধের আশঙ্কা করছে। ইসি কর্তৃক পর্যবেক্ষক হিসেবে স্বীকৃত অনেক প্রতিষ্ঠানের ইতিপূর্বে নির্বাচন পর্যবেক্ষেণর কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। এছাড়াও, ইসির স্থানীয় পর্যবেক্ষক নির্দেশিকাতে পর্যবেক্ষকদের অধিকারের উপর বেশ কিছু অযৌক্তিক বিধিনিষেধ রয়েছে। এরকম একটি নিষেধাজ্ঞা হল, পর্যবেক্ষকদের সারাদিন একই ভোটকেন্দ্রে পর্যবেক্ষণ করা নিষেধ। নির্দিষ্ট স্থানে বা স্থির পর্যবেক্ষণের উপর এই সীমাবদ্ধতা পর্যবেক্ষকের অধিকারের জন্য বিশ্বব্যাপী নিয়মের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

বিশ্বাসযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অহিংস নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ

বাংলাদেশী অংশীজনরা নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে এবং তার পরেও সামগ্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা বাড়ানোর জন্য যেসব পদক্ষেপ নিতে পারে সে বিষয়ে প্রতিনিধি দল নিম্নলিখিত সুপারিশগুলি প্রদান করে। বিশ্বাসযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অহিংস নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের রোডম্যাপে এই সুপারিশগুলি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত:

প্রস্তাবনা ১: গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী ইস্যুতে খোলামেলা এবং বাস্তব সংলাপে অংশ নেওয়া।

প্রস্তাবনা 2: মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করা এবং নাগরিকদের জন্য একটি উন্মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা যেখানে ভিন্নমতকে সম্মান করা হয়।

সুপারিশ ৩: অহিংসতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া এবং রাজনৈতিক সহিংসতার অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনা।

সুপারিশ ৪: স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থাপনা জোরদারসহ সকল দলকে অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য পরিবেশ তৈরি করা।

সুপারিশ ৫: নাগরিকদের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সক্রিয় নির্বাচনী অংশগ্রহণের সংস্কৃতি প্রচার করা।

প্রতিনিধিদল স্বীকার করে যে, বাংলাদেশের জনগণই শেষ পর্যন্ত তাদের নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বৈধতা এবং তাদের দেশের গণতান্ত্রিক উন্নয়ন নির্ধারণ করবে। তাই প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমর্থন ও শক্তিশালী করার চেতনায় এই প্রাক-নির্বাচনী বিবৃতি প্রদান করে।

Up ArrowTop